নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অজানা ইতিহাস
ইতিহাস মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন বখতিয়ার খিলজি। মেরে ফেলেছিলেন সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত হাজার দুয়েক ছাত্র-শিক্ষককে। তারপর আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন নালন্দার।
আগুনে পুড়ে গিয়েছিল মন্দির, মঠ, হোস্টেল থেকে লাইব্রেরি অব্দি সব কিছু। শোনা যায় অন্তত গোটা তিনেক বিশালাকার লাইব্রেরি(রত্নসাগর, রত্নরঞ্জক আর রত্নদধি) ছিল নালন্দায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইব্রেরি রত্নদধি একাই ছিল ন'তলার! বাকিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না গেলেও আকারে-বহরে সেগুলোও রত্নদধির কাছাকাছি ছিল বলেই জানা যায়। ইতিহাস বলছে যখন বখতিয়ার খলজি নালন্দার আগুন ধরিয়ে দেয় তখন নালন্দায় বর্তমান পুঁথি এবং বইয়ের সংখ্যা ছিল কাছাকাছি ন'লাখ! শোনা যায় লাইব্রেরির আগুন নিভতেই সময় লেগেছিল প্রায় তিন মাস।
আসলে বৌদ্ধদের ইতিহাস সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। অন্য আরো অনেক কারণের পাশাপাশি দুটো মূল বিষয় জড়িত এই তথ্যহীনতার জন্য। এক, বৌদ্ধরা নিজেদের ইতিহাস তেমন একটা লেখেনি। আর দুই, যেটুকু ইতিহাস সঞ্চিত ছিল নালন্দা-বিক্রমশীলা-ওদন্তপুরিতে, তার একটা বড় অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল খিলজির লাগানো আগুনে। তাও ভাগ্য ভালো যে হিউ-এন-সাং প্রায় ছ'শো সাতান্ন আর ইয়েৎসিন চারশো পুঁথির হাতে লেখা প্রতিলিপি নিয়ে গিয়েছিলেন সঙ্গে করে। এগুলো আর অন্য আরো কিছু পর্যটকের নিয়ে যাওয়া পুঁথির প্রতিলিপি ও ওনাদের আত্মজীবনী গুলোই এখন 'বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের' মতো তৎকালীন সময়ের ইতিহাস বর্ণনা করে। কিন্তু ঘটনা হল নালন্দার ১০০০০ জন ছাত্রের জন্যে শিক্ষক ছিল দেড় থেকে দু'হাজার (ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ৫:১)। মূলত মহাযান বৌদ্ধধর্মের মঠ হওয়া সত্ত্বেও নালন্দায় পড়ানো হতো হীনযান বৌদ্ধদর্শন , হিন্দু দর্শন, শাখ্য দর্শন, জ্যোতিষবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, শল্যবিদ্যা, ধাতুবিদ্যা, হেতুবিদ্যা(লজিক), শব্দবিদ্যা(ব্যাকরণ) সমেত আরো অনেক বিষয়। পড়তে আসতো তিব্বত, চীন, শ্রীলঙ্কা, কোরিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, পারস্য, তুর্কি সমেত এশিয়ার প্রায় সব দেশের সেরা সেরা ছাত্ররা। পড়াশোনার জন্যে ছিল আটটা হলঘর আর তিনশো সাধারণ কক্ষ। প্রতিটা ছাত্রর জন্যে ছিল এক কামরার আলাদা আলাদা উচ্চমানের থাকার ঘর। আর ছাত্র-শিক্ষকদের জীবনধারণ আর পড়াশোনার এই সমস্ত খরচ বহন করতো মহাবিহার কর্তৃপক্ষ। পাশের দুশো গ্রামের রাজস্বের স্থায়ী অর্থ ছাড়াও দেশ বিদেশের থেকে নিয়মিত আসা অনুদানের ফলে অর্থসংকটে কখনও সেভাবে ভুগতে হয়নি নালন্দাকে। গুপ্ত রাজাদের থেকে শুরু করে হর্ষবর্ধন হয়ে পাল রাজারা পর্যন্ত দরাজ হস্তে দান করে গেছেন নালন্দাকে। ফলস্বরূপ প্রায় আটশো বছর ধরে আর্যভট্ট থেকে শীলভদ্র হয়ে ধর্মপাল, নাগার্জুন, অতীশ দীপঙ্কর অব্দি হাজার হাজার কৃতি ছাত্র ও শিক্ষক তৈরি করতে পেরেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
অবশ্য নালন্দার নিয়ে যেটুকু জানা যায় তা খুবই সামান্য। আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদেরা মাটি খুঁড়ে বের করে আনেন এক খুন হয়ে যাওয়া ইতিহাসকে। যদিও তিরিশ একরের যেটুকু অংশ খনন করা সম্ভব হয়েছে তা মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাংশও হবে কিনা সন্দেহ। তবু যা মিলেছে সেটাকে যদি পুরোটার মাপকাঠি বলে ধরে নেওয়া হয়, তবে বলে দেওয়া অত্যুক্তি হবে না যে নালন্দা তর্কাতীতভাবে প্রাচীন যুগের বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়।
এমনি এমনি ভিনসেন্ট স্মিথ বলেননি যে শুধু নালন্দার ইতিহাস জানলেই মহাযান বৌদ্ধধর্মের চর্চা সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
নিচের ছবিগুলো নালন্দার খননকার্য শুরু হওয়ার এবং চলার কিছু দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন।
আগুনে পুড়ে গিয়েছিল মন্দির, মঠ, হোস্টেল থেকে লাইব্রেরি অব্দি সব কিছু। শোনা যায় অন্তত গোটা তিনেক বিশালাকার লাইব্রেরি(রত্নসাগর, রত্নরঞ্জক আর রত্নদধি) ছিল নালন্দায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইব্রেরি রত্নদধি একাই ছিল ন'তলার! বাকিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না গেলেও আকারে-বহরে সেগুলোও রত্নদধির কাছাকাছি ছিল বলেই জানা যায়। ইতিহাস বলছে যখন বখতিয়ার খলজি নালন্দার আগুন ধরিয়ে দেয় তখন নালন্দায় বর্তমান পুঁথি এবং বইয়ের সংখ্যা ছিল কাছাকাছি ন'লাখ! শোনা যায় লাইব্রেরির আগুন নিভতেই সময় লেগেছিল প্রায় তিন মাস।
আসলে বৌদ্ধদের ইতিহাস সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। অন্য আরো অনেক কারণের পাশাপাশি দুটো মূল বিষয় জড়িত এই তথ্যহীনতার জন্য। এক, বৌদ্ধরা নিজেদের ইতিহাস তেমন একটা লেখেনি। আর দুই, যেটুকু ইতিহাস সঞ্চিত ছিল নালন্দা-বিক্রমশীলা-ওদন্তপুরিতে, তার একটা বড় অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল খিলজির লাগানো আগুনে। তাও ভাগ্য ভালো যে হিউ-এন-সাং প্রায় ছ'শো সাতান্ন আর ইয়েৎসিন চারশো পুঁথির হাতে লেখা প্রতিলিপি নিয়ে গিয়েছিলেন সঙ্গে করে। এগুলো আর অন্য আরো কিছু পর্যটকের নিয়ে যাওয়া পুঁথির প্রতিলিপি ও ওনাদের আত্মজীবনী গুলোই এখন 'বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের' মতো তৎকালীন সময়ের ইতিহাস বর্ণনা করে। কিন্তু ঘটনা হল নালন্দার ১০০০০ জন ছাত্রের জন্যে শিক্ষক ছিল দেড় থেকে দু'হাজার (ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ৫:১)। মূলত মহাযান বৌদ্ধধর্মের মঠ হওয়া সত্ত্বেও নালন্দায় পড়ানো হতো হীনযান বৌদ্ধদর্শন , হিন্দু দর্শন, শাখ্য দর্শন, জ্যোতিষবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, শল্যবিদ্যা, ধাতুবিদ্যা, হেতুবিদ্যা(লজিক), শব্দবিদ্যা(ব্যাকরণ) সমেত আরো অনেক বিষয়। পড়তে আসতো তিব্বত, চীন, শ্রীলঙ্কা, কোরিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, পারস্য, তুর্কি সমেত এশিয়ার প্রায় সব দেশের সেরা সেরা ছাত্ররা। পড়াশোনার জন্যে ছিল আটটা হলঘর আর তিনশো সাধারণ কক্ষ। প্রতিটা ছাত্রর জন্যে ছিল এক কামরার আলাদা আলাদা উচ্চমানের থাকার ঘর। আর ছাত্র-শিক্ষকদের জীবনধারণ আর পড়াশোনার এই সমস্ত খরচ বহন করতো মহাবিহার কর্তৃপক্ষ। পাশের দুশো গ্রামের রাজস্বের স্থায়ী অর্থ ছাড়াও দেশ বিদেশের থেকে নিয়মিত আসা অনুদানের ফলে অর্থসংকটে কখনও সেভাবে ভুগতে হয়নি নালন্দাকে। গুপ্ত রাজাদের থেকে শুরু করে হর্ষবর্ধন হয়ে পাল রাজারা পর্যন্ত দরাজ হস্তে দান করে গেছেন নালন্দাকে। ফলস্বরূপ প্রায় আটশো বছর ধরে আর্যভট্ট থেকে শীলভদ্র হয়ে ধর্মপাল, নাগার্জুন, অতীশ দীপঙ্কর অব্দি হাজার হাজার কৃতি ছাত্র ও শিক্ষক তৈরি করতে পেরেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
অবশ্য নালন্দার নিয়ে যেটুকু জানা যায় তা খুবই সামান্য। আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদেরা মাটি খুঁড়ে বের করে আনেন এক খুন হয়ে যাওয়া ইতিহাসকে। যদিও তিরিশ একরের যেটুকু অংশ খনন করা সম্ভব হয়েছে তা মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাংশও হবে কিনা সন্দেহ। তবু যা মিলেছে সেটাকে যদি পুরোটার মাপকাঠি বলে ধরে নেওয়া হয়, তবে বলে দেওয়া অত্যুক্তি হবে না যে নালন্দা তর্কাতীতভাবে প্রাচীন যুগের বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়।
এমনি এমনি ভিনসেন্ট স্মিথ বলেননি যে শুধু নালন্দার ইতিহাস জানলেই মহাযান বৌদ্ধধর্মের চর্চা সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
নিচের ছবিগুলো নালন্দার খননকার্য শুরু হওয়ার এবং চলার কিছু দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন।

Comments
Post a Comment